সম্পাদকীয়
এক শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, উচ্চ আদালতকে অমান্য ও উপেক্ষা করে কোনো মানুষ ভালো থাকতে পারে না। কোনো দেশের মানুষ উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে টিকে থাকতে পারে না। এটি ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নয়, বিষয়টি চেয়ারের। এই সুপ্রিম কোর্ট টিকে না থাকলে ১৮ কোটি মানুষের জন্য খুবই বিপদ হবে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, ফাইল ছবি।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চেএমন মন্তব্য করেন।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে ভর্তিচ্ছু ১ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ০৬/০২/২০২৪ ইং তারিখ বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াত লিজুর হাইকোর্ট বেঞ্চ
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল কে রিট আবেদনকারীর ছেলেকে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মতিঝিল শাখায় নবম শ্রেণীতে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে (বিভাগ আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করে) ১৫ দিনের মধ্যে ভর্তি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। যা গত ০৭/০২/২০২৪ ইংরেজি তারিখ (আদালত আদেশের পরবর্তী দিন) মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের স্পেশাল মেসেঞ্জার এর মাধ্যমে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষকে আদালতের আদেশের কপি পৌঁছে দেওয়া হয়। সেই হিসাবে গত ২২-০২-২০২৪ ইংরেজি তারিখ আদালতের দেওয়া রায়ের ১৫ দিনের সময় সীমা শেষ হয়ে যায়।
এ সময় রিট আবেদনকারী বারবার প্রিন্সিপালের নিকট ভর্তির ব্যাপারে আবেদন নিবেদন করেন কিন্তু প্রিন্সিপাল মহোদয় জানান বিষয়টি তার কমিটিকে জানানো হবে, কমিটিতে ব্যাপারটি জানানো হয়েছে, সেখান থেকে নির্দেশ আসলে ভর্তি নেওয়া হবে, পরে আসেন, পরে জানানো হবে, আপনার মোবাইল নাম্বার লিখে দিয়ে যান আমরা আপনাকে জানাবো, আদালত বললেই কি ভর্তি নিতে হবে, আমরা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারি, ইত্যাদি বলে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন।
অপরদিকে কোমলমতি শিক্ষার্থী যখন জানতে পারেন মহামান্য হাইকোর্ট অধ্যক্ষকে তার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তির নির্দেশ দিয়েছেন সেই থেকে নিজেকে স্কুলের ছাত্র বলে মনে করছে।
আজ-কাল করতে করতে ইতিমধ্যে ২০২৪ শিক্ষা বর্ষের ৪ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। ভর্তির অনিশ্চয়তার কারণে শিক্ষার্থীর মধ্যে মানসিক অস্থিরতা অনিশ্চয়তা হতাশা বিরাজ করছে, এভাবে উচ্চ আদালতের আদেশকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করায় রিট আবেদনকারী মানসিকভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন। শিক্ষার্থী সহ পুরো পরিবারে বিরাজ করছে চরম হতাশা।
“উচ্চ আদালতকে অমান্য করে কেউ ভালো থাকতে পারে না: হাইকোর্ট”
ভুক্তভোগী ও বিচারপ্রার্থীদের ‘শেষ আশ্রয়স্থল’ হলো আদালত। তাই রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আদালতের বিশেষ সম্মান বা মর্যাদা রয়েছে। এ কারণে আদালত অবমাননা বিষয়টি যেমন আলোচিত, তেমনি গুরুত্বপূর্ণও বটে। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত আইনে (দ্য কনটেম্পট অব কোর্টস অ্যাক্ট, ১৯২৬) আদালত অবমাননার কোনো সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি।
এর ফলে আদালত অবমাননা কী, তা বুঝতে বিভিন্ন সময়ে উচ্চ আদালতের দেওয়া আদেশ, নির্দেশ বা পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভর করতে হয়। সহজ করে বললে আদালত অবমাননা হতে পারে তিনভাবে। প্রথমত, আদালতের অভ্যন্তরে বিচারিক কার্যক্রম চলা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে আদালত বা বিচারককে উদ্দেশ করে ‘অবমাননাকর’ কিছু বলা বা আদালতের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করা।
দ্বিতীয়ত, আদালতের দেওয়া কোনো রায়, আদেশ বা নির্দেশ অমান্য করা এবং তৃতীয়ত, আদালতের বাইরে কোনো সভা–সমাবেশে অথবা সংবাদমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আদালত বা বিচারক বা বিচারকার্য নিয়ে ‘মর্যাদাহানিকর’ বক্তব্য দেওয়া।
মোহাম্মদ এমাম হোসাইন, অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত), আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
এ রিট আবেদনকারীর পক্ষের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ এনামুল হোসেন লিংকন বলে এক্ষেত্রে আইডিয়াল স্কুলের মাননীয় অধ্যক্ষ আদালতের দেওয়া কোনো রায়, আদেশ বা নির্দেশ অমান্য করেছেন।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন হলো এর সংবিধান। সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টকে ‘কোর্ট অব রেকর্ড’ ঘোষণা করা হয়েছে।
একই সঙ্গে এই অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সুপ্রিম কোর্টকে তাঁর অবমাননার জন্য তদন্তের আদেশদান বা দণ্ডাদেশের ক্ষমতাসহ আইন সাপেক্ষে অনুরূপ আদালতের সব ক্ষমতার অধিকারী করা হয়েছে। তাই সুপ্রিম কোর্ট চাইলে যেকোনো আদালত অবমাননার ঘটনা আমলে নিতে এবং বিচার করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে বিষয়টি আদালতের কাছে পুনরায় উপস্থাপন করতে হবে এবং প্রতিকার চাইতে হবে।
মোঃ রবিউল ইসলাম, সভাপতি (এডহক কমিটি) ও অতিরিক্ত সচিব
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ভুক্তভোগী রিট আবেদনকারীর বক্তব্য যেহেতু আমার আর একটা সন্তান এই স্কুলেই পড়ে এর ফলে আমার ওই বাচ্চার উপর স্কুল কর্তৃপক্ষ ভিন্ন রূপ আচরণ করতে পারে তাতে আমার আরেক সন্তানের শিক্ষা জীবনের ব্যাপক ক্ষতি ভয় পাচ্ছি।
আলোচিত ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ থেকে এরূপ আচরণ, ভুক্তভোগী আবেদনকারী ও এই শিক্ষার্থীর মধ্যে কি মানসিক অশান্তি, নিশ্চয়তা তা ভুক্তভোগী কাউকে বলে বোঝাতে পারবে না। এক্ষেত্রে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের মত অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষের নিকট এরূপ আচরণ উচ্চ আদালতের প্রতি কি _ _ _ _ _।
এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী আবেদনকারী কিভাবে প্রতিকার পেতে পারে?
এক্ষেত্রে ঢাকা ৮ নির্বাচনী এলাকার মাননীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাসিম, অথবা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় বা মাননীয় শিক্ষা সচিব মহোদয় সমপর্যায়ের কর্তাদের সদয় দৃষ্টি ছাড়া মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের অধ্যক্ষের আদালতের প্রতি এরুপ আচরণের প্রতিকার পাওয়ার প্রশ্নই আসেনা।
যেহেতু আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ মতিঝিল এলাকায় অবস্থিত এবং এ এলাকার নির্বাচিত সংসদ সদস্য (ঢাকা ৮ নির্বাচনী এলাকার) মাননীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাসিম সাহেবের প্রতি সদয় সহানুভূতির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সেই সাথে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের মাননীয় অধ্যক্ষের প্রতি অনুরোধ থাকবে আদালতে রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আবেদনকারীর সন্তানকে ভর্তি দিয়ে তারস্বাভাবিক শিক্ষা জীবনের সহায়তা করার।
লেখক
মোঃ কল্লোল আলী বাবু
নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক বাংলা খবর, প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স ফোরাম (বিসিআরএফ)।