মিজানুর রহমান, ছবি সংগৃহীত।
দুই সপ্তাহ পার হলেও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার নাওড়া এলাকার তরুণ দ্বীন ইসলাম (২১) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। উল্টো ওই মামলার তিন নম্বর আসামি উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান প্রকাশ্যে রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আচরণবিধি ভেঙ্গে কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনের প্রচারেও অংশ নিচ্ছেন। দিনের পর দিন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশের দাবি মিজানুরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
মিজানুর রহমান রংধনু গ্রুপের পরিচালক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য। সবশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
গত ৬ জুন কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের পরিবারের সঙ্গে সাবেক ইউপি সদস্য ও পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশাররফ হোসেনের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে মোশাররফ হোসেনের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে দ্বীন ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। দ্বীন ইসলামের মায়ের অভিযোগ মিজানুর রহমানের গুলিতে দ্বীন ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। তবে শুরু থেকেই মিজানুর দাবি করে আসছেন ঘটনার সময় তিনি এলাকাতে ছিলেন না।
রূপগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, দ্বীন ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত ১৩ জুন নিহতের বাবা বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জসিম উদ্দিন, রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তাঁর ভাই মিজানুর রহমান ও আরেক ভাই সফিকুল ইসলামকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, এলাকায় সাধারণ মানুষের জমি দখলকে কেন্দ্র করে হওয়া এই সংঘর্ষে ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুরের গুলিতে দ্বীন ইসলাম নিহত হয়।
নিহত দ্বীন ইসলামের বাবা বিল্লাল হোসেন জানান, পুলিশ গত ১৩ জুন মামলা নিলেও এখনো পর্যন্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করেনি। উল্টো গত ১৬ জুন থেকে রফিকুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান রূপগঞ্জে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমনকি মিজানুর কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনে একজন মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। সভা সমাবেশ করছেন। এসব বিষয় পুলিশকে জানানো হলেও পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করছে না।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগামী ২৬ জুন কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে মোবাইল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আবুল বাশার বাদশার হয়ে নিয়মিত নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিচ্ছেন মিজানুর। গত কয়েকদিন ধরে তাঁকে পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালাতে দেখা যাচ্ছে৷ শুক্রবার তিনি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় দিনভর নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। বিকেলে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাঞ্চন ভারতচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি নির্বাচনী সভায় অংশ নেন ভাইস চেয়ারম্যান৷ এসময় রূপগঞ্জ থানা পুলিশ সদস্যরা সভার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।
মিজানুর নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয়ায় নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গের পাশাপাশি ভোটারদের মধ্যে ভীতি তৈরি হচ্ছে বলে নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী কাঞ্চন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হয়ে তিনি নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। এটা নির্বাচনী আচরণ বিধির লঙ্ঘন। ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ কিছুদিন আগে তিনি নিজে গুলি করে দ্বীন ইসলামকে হত্যা করেছেন। নির্বাচনী মাঠে তার উপস্থিতি ভোটারদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, মিজানুর প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিচ্ছেন বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালিয়েছি৷ কিন্তু তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তাজাল্লি ইসলাম বলেন, আমরা এবিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি৷ কোন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারেন না। আমরা এবিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’
এসব অভিযোগ বিষয়ে মিজনুর বলেন, আমি নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিইনি। নির্বাচন বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান।