আমরা সবাই জানি, নিউজ হলো চলমান কৌতুহল উদ্দীপক ঘটনা, যা বেশিরভাগ মানুষ জানতে আগ্রহী। সেই নিউজে জনগোষ্ঠী, সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে পরের ধাপেই প্রশ্ন উঠে- আমি কি নিরপেক্ষ হবো, নাকি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ লিখবো? নাকি জনগণ ও রাষ্ট্রের পক্ষে থাকবো? নাকি কোনো রাষ্ট্রের সীমারেখার মাঝে আমার সাংবাদিকতার দায়বদ্ধতা আটকে থাকবে না? নাকি আমার পেশাগত দায়িত্বশীলতা থাকবে মানুষের জন্য, দায়বোধের সীমানাও হবে বিশ্ব জুড়ে বিস্তৃত- উইদাউট বর্ডার স্টাইলে?
নিকট অতীতের একটি উদাহরণ উল্লেখ করা জরুরি মনে করছি। বাংলাদেশের নিরীহ তরুণী ফেলানী যখন দিনাজপুরের সীমান্তে ভারতীয় কাটাতারের পাশে ছিলেন- ঠিক তখনই বিএসএফ এর টহলরত সদস্যরা তার উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। ফলে গুলিতে নিহত ফেলানীর মৃতদেহটি দীর্ঘসময় ধরে কাটাতারের উপরেই ঝুলতে থাকে। এরচেয়েও করুণ দৃশ্যপটের সূচণা ঘটে যখন বিএসএফ জওয়ানরা ওই তরুণির মৃতদেহ বাশের লাঠিতে শেয়াল কুকুরের মতো বেধে নিজেদের ক্যাম্পের দিকে নিয়ে যায়। সেই নির্মমতার পুরোটাই ভিডিও রেকর্ডিং করতে সক্ষম হন ভারতেরই মিডিয়া-এনডিটিভি। তারা অবিকল সে কাহিনী ফলাওভাবে প্রচার করায় মুহূর্তেই তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও এনডিটিভি‘র সে সংবাদ দফায় দফায় প্রকাশ হতে থাকলে গোটা ভারতই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। সীমাহীন সে অমানবিকতায় বিশ্বজুড়েই নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় বইতে থাকে।
এই উদাহরণের মাধ্যমে আমি এনডিটিভি’র উইদাউট বর্ডার স্টাইলের সাংবাদিকতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এর বিপরীতে বলতে দ্বিধা নেই, আমি দেশপ্রেমে মুগ্ধ হয়ে বরাবরই উইদ-ইন বর্ডারের সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী ছিলাম। যে কারণে ১৯৯৮ সালেও মহুরীরচর সীমান্তে বিডিআর-বিএসএফ এর বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় লিখেছি: ‘রাতভর বিএসএফ এর উস্কানিমূলক শত শত রাউন্ড গুলিবর্ষণের প্রেক্ষিতে বিডিআর আত্মরক্ষার্থে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়।’ এবার এনডিটিভি’র সাংবাদিকতার সঙ্গে আমার এ সাংবাদিকতা একটু মিলিয়ে দেখুন তো?