সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবার ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের সবাই ইসলামি রাজনৈতিক শক্তি, এমন ভাবনা থেকে ভারতকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে বসে যে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন, তা একটি ‘অবন্ধুসুলভ আচরণ’। তিনি বলেছেন, ‘দুই দেশের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে বাংলাদেশ (সরকার) তাকে (শেখ হাসিনা) ফেরত না নেওয়া পর্যন্ত ভারত যদি তাকে রাখতে চায়, তবে শর্ত হলো-তাকে চুপ থাকতে হবে।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ভারতে তার (শেখ হাসিনার) অবস্থানের কারণেই কেউই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। কারণ, আমরা তাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে চাই। তিনি ভারতে আছেন এবং মাঝেমধ্যেই কথা বলছেন, যা সমস্যাজনক। তিনি যদি চুপ থাকতেন, সেখানে নিজের দুনিয়ায় ডুবে থাকতেন, তবে আমরা হয়তো ভুলে যেতাম, মানুষও হয়তো এটা ভুলে যেত। কিন্তু ভারতে বসে তিনি কথা বলছেন, এটা কেউ পছন্দ করছে না।’
১৩ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশে যে সহিংসতা, হত্যা ও ভাঙচুর হয়েছে, এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার দাবি করেন। এ বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে ড. ইউনূস বলেন, ‘এটি না আমাদের জন্য ভালো, আর না ভারতের জন্য ভালো। বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তি আছে।’
শেখ হাসিনার কথা বলার বিষয়ে বাংলাদেশ ভারতকে তার অবস্থান জানিয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মৌখিকভাবে এবং বেশ দৃঢ়ভাবে জানানো হয়েছে যে তার চুপ থাকা উচিত।’ তিনি বলেন, ‘সবাই এটা বোঝে। আমরা বেশ দৃঢ়ভাবে বলেছি যে তার চুপ থাকা উচিত। এটি আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বহীন আচরণ। তাকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং সেখান থেকে তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি যে স্বাভাবিক নিয়মে সেখানে গেছেন, তা নয়। জনগণের অভ্যুত্থান ও জনরোষের মুখে তিনি পালিয়ে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘ভারতে বসে তিনি বক্তব্য এবং নির্দেশনা দিচ্ছেন, এটা কেউই পছন্দ করছে না। এটা আমাদের জন্য বা ভারত-কারও জন্যই ভালো না। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার নৃশংসতার বিপরীতে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে জনগণের সামনে বিচার করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে, তা না হলে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে না। তিনি যে ধরনের নৃশংসতা চালিয়েছেন, তাকে এখানে সবার সামনে বিচার করা হবে।’
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ড. ইউনূস নয়াদিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘কেবল শেখ হাসিনার নেতৃত্বই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে-নয়াদিল্লিকে এ ন্যারেটিভ বাদ দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আগামীর পথ হলো ভারতের এই ন্যারেটিভ থেকে বেরিয়ে আসা। ন্যারেটিভটি হলো-সবাই ইসলামপন্থি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইসলামপন্থি এবং বাকি সবাই ইসলামপন্থি এবং এই দেশ আফগানিস্তানে পরিণত হবে। আর শেখ হাসিনার হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ। ভারত এই আখ্যানে বিমোহিত। ভারতকে এই অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও আরেকটি প্রতিবেশী-এটিও ভারতকে মনে রাখতে হবে।’
দুদেশের সুসম্পর্ক এখন তলানিতে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশ ভারতকে কাজ করতে হবে।’
ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, ‘ট্রানজিট এবং আদানির বিদ্যুৎচুক্তির মতো কিছু চুক্তি পুনর্বিবেচনার দাবি রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সবাই বলছে এটা করা দরকার। আমরা প্রথমে দেখব কাগজে কী আছে এবং দ্বিতীয়ত, প্রকৃত অবস্থা আসলে কী। আমি এ বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে এখনই বলতে পারছি না। যদি পর্যালোচনার প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করব।’
বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সাম্প্রতিক ঘটনা এবং ভারতের এ বিষয়ে উদ্বেগকে অতিরঞ্জিত উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের বিষয়টিকে এত বড় আকারে চিত্রিত করার চেষ্টার বিষয়টি একটি অজুহাত মাত্র।’
সাক্ষাৎকারে ৮৪ বছর বয়সি নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের উন্নতির জন্য একযোগে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। ড. ইউনূস বলেন, ‘উভয় দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং এটি বর্তমানে একটি বন্ধুর পথে আছে।’