কুড়িগ্রামের রাজারহাটে এমন অভিনব প্রতারণায় নেমেছে একটি সিন্ডিকেট। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এক লাখের মতো এনআইডি কার্ড।
কোনো জামানত লাগবে না। নেই কোনো সুদ। শুধু কিস্তিতে আসল টাকা পরিশোধ করলেই হবে। লাগবে না কোনো কাগজপত্র। কেবল জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ফটোকপি জমা দিলেই মিলবে এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত! আর এ টাকা ঋণ দেবে সুইস ব্যাংক এবং বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান, ডঃ মোঃ ইউনূস, এমন কিছু বক্তব্য দিলেন, সংগঠনটির আহব্বায়ক আবুল বাশার ।
টাকা এনে মানুষের মধ্যে বিলি করে দেবে। আমরা গরিব মানুষ তাই এনআইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়েছি। ফটোকপি দিয়ে যদি ঋণ নাও পাই তাহলে ক্ষতি তো আর কিছু হলো না। তাই এনআইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়েছি।
জানা গেছে, চক্রটির সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে সাধারণ মানুষকে জড়ো করে। পরে সেখান থেকে শিক্ষিত ও স্মার্ট দেখে উপজেলাভিক্তিক বিশেষ করে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আর, সাধারণ মানুষকে বোঝানো হচ্ছে বাংলাদেশের যেসব কালো টাকা সুইস ব্যাংকে জমা পড়ে আছে সেগুলো কিছুদিনের মধ্যেই উদ্ধার করে গরিব-অসহায় কর্মমুখী মানুষের মধ্যে বিনা সুদে বিতরণ করবেন তারা।
আর এমন প্রতারণায় নেমেছে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে একটি কথিত এনজিও। এনআইডি কার্ডের ফটোকপির পাশাপাশি তারা হাতিয়ে নিচ্ছে টাকাও। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে জনপ্রতি দেওয়া হবে এক লাখ টাকা। আর যারা মোটামুটি স্বাবলম্বী ও ব্যবসায়ী তাদের দেওয়া হবে এক লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা। আইডি কার্ড সংগ্রহের পাশাপাশি গোপনে কার্ড প্রতি ২০ টাকা থেকে শুরু এক হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে চক্রটির বিরুদ্ধে।
রাজার হাট উপজেলার বতলার পার এলাকার গৃহবধূ সুফিয়া বেগম বলেন, এক লাখ টাকার ঋণ দেওয়ার কথা বলে এনআইডি কার্ডের ফটোকপির সঙ্গে এক সত টাকা করে নিয়েছে আমাদের এলাকা থেকে। আমাদের বাড়ির পাসে আবার কারো কারো কাছে এক হাজার করে টাকাও দিয়েছে।
রাজার হাট উপজেলার অনেকেই বলেন, এলাকায় আওয়াজ পড়ে গেছে সুইস ব্যাংক থেকে টাকা এনে মানুষের মধ্যে বিলি করে দেবে। আমরা গরিব মানুষ তাই এনআইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়েছি। ফটোকপি দিয়ে যদি ঋণ নাও পাই তাহলে ক্ষতি তো আর কিছু হলো না। তাই এনআইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়েছি। বোতলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আসা অনেকে একথা বলেন।
এ বিষয় আবুল বাসার কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনের নাম ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’। সংগঠনের প্রধান কার্যালয় থেকে এসেছি। এলাকার দুস্থ্য ও পিছিয়ে পড়া নারী-পুরুষের একত্রিত করে আগামী ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহবাগে মহাসমাবেশ সফল করার জন্য এসেছি। জেলার রাজারহাট উপজেলার বোতলার পার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশ শেষে উপস্থিত অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’র আহবায়ক মো. আবুল বাশার এর সংগে কথা বললে তিনি জানান, আমারা দেশ থেকে পাচার হওয়া কালো টাকা সুইচ ব্যাংক সহ বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্ধার করে দেশের দুস্থ্য ও অসহায় নারী-পুরুষ দের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা এক কালিন বিলিয়ে দেব ।
এক প্রশ্নের জবাবে আবুল বাশার বলেন, আমার নামে নাকি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে, বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। সংগঠনের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য, একটি চক্র অপপ্রচার চালাচ্ছে।
কথিত ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে সংগঠনটির রাজার হাট উপজেলার দায়িত্বে থাকা নাম অজানা কয়েক জন বেকতি জানান, তাদের সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ধানমন্ডি এলাকায় সিটি কলেজের পাশে।সংগঠনের চেয়ারম্যান তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এরপর বিভিন্ন গ্রাম মহল্লায় গিয়ে নারীদের মাধ্যমে আইডি কার্ড সংগ্রহ করেছেন। এ পর্যন্ত জেলা থেকে সবমিলিয়ে লক্ষাধিক আইডি কার্ড কেন্দ্রীয় অফিসে জমা দিয়েছেন। তারা সবাই কিছুদিনের মধ্যেই বিনা সুদে ঋণ পাবেন।
রাজার হাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ওয়াহেদুল ইসলাম তিনি বলেন, ঘটনাটি শুনেছি,বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.