আওয়ামীলীগ সরকার আমলে ডজন ডজন মামলায় সীমাহীন হয়রানি শিকার চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিক-সম্পাদক আয়ান শর্মা নির্দলীয় নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালনি সরকার আমলেও রেহাই পাচ্ছেন না। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, ভূতুরে মামলা সাজানো হয়েছে, হয়রানির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে সংঘবদ্ধ চক্র। তারা আয়ান শর্মার বিরুদ্ধে বিতর্ক উস্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, তার জীবনযাত্রা, কর্মকান্ডের সবকিছুকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে চাইছে।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী ঘটনার তারিখ ২৬ নভেম্বর, সময় বিকেল ৩টা।
অথচ দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিন উপদেষ্টা সম্পাদক আয়ান শর্মা ২৩ নভেম্বর থেকে ২৬ নভেম্বর ১২ টা পর্যন্ত ছিলেন ঢাকায়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পিএইচপি গ্রুপের দায়ের করা মামলা মোকাবেলায় উচ্চ আদালতে প্রতিকার চাইতে যান তিনি। আয়ান শর্মা ২৬ নভেম্বর দুপুর পর্যন্ত ঢাকার একটি তারকামানের হোটেলে অবস্থান শেষে বেলা ১টায় ঢাকা ছাড়েন। মেঘনা সেতু পার হওয়ার তথ্য উপাত্ত ও সেতুর টোলবক্সের সিসি ক্যামেরায়ও ওই স্থান অতিক্রম করার ভিডিওচিত্র উঠে এসেছে। বিকেল তিনটায় চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় ঘটনার সময় আয়ান শর্মা ফেনী অতিক্রম করছিলেন, অথচ মামলার বিবরণ অনুসারে তাকে চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় স্বশরীরে উপস্থিত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।
চিন্ময় প্রভু ও চট্টগ্রামে জামায়াতের আমির শাহাজান চৌধুরীর সঙ্গে আয়ান শর্মার একটি ছবি ভাইরাল করেন মামলায় হেরে যাওয়া প্রতিপক্ষ ও আওয়ামী পন্থীরা।
ছবির সূত্র ধরে তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পর দেশে বেশ কিছু হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের প্রতিবাদে হিন্দুরা যখন মাঠে নামে । ১১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরের আমির শাহাজান চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরের নায়েবে আমির ড. আ জ ম ওবায়দুল্লাহর নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামীর একটি দল পরিদর্শনে যান চট্টগ্রামের ইসকন প্রবর্তক মন্দিরে। ওই সময় সনাতনী সম্প্রদায়ের মধ্যে আতংক কাটাতে, মিডিয়ার প্রচারের প্রয়োজনে মন্দির কর্তৃপক্ষ ও জামায়াত নেতাদের পক্ষ থেকেই আয়ান শর্মাকে বার্তা পাঠানো হয়। নিউজটি কভার করাসহ পরিদর্শনকারীদের সাথে থাকার জন্যও তাকে অনুরোধ জানানো হয়।
আয়ান শর্মা ওই সময় মন্দিরে যান এবং জামায়াতে ইসলামী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটান। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে জামায়াত নেতাদেরকে মন্দিরের দ্বিতল ভবনে উঠতে বেগ পেতে হয়। দ্বিতল ভবনে উঠতে গিয়ে চিন্ময় প্রভু জামায়াতে ইসলামী আমির শাহাজান চৌধুরীর ছাতা ধরলে, বৃষ্টির পানিতে পা পিছলে পড়ার শংকায় জামায়াতে ইসলামী আমির সাহেবের হাত ধরে ওপরে তলায় তুলেন। সনাতনীদের শংকার কাটানোর মনো প্রত্যাশায় তিনি ছবিগুলো নিজের পেইজেও পোস্ট করেন। আর এসব ছবির মধ্য থেকে উদ্দেশ্যমূলক একটি ছবি বেছে নিয়ে ভাইরাল করাসহ বিতর্ক উস্কে দেয়ার পাঁয়তারা চালানো হয়েছে।
জামায়াতের আমির নয় শুধু হেফাজতে ইসলামের চট্টগ্রাম মহানগর নেতারাও ওই সংকটময় সময়ে সনাতনীদের মনের সাহস যোগাতে গিয়েছিলেন ইসকন প্রবর্তক মন্দিরে। এ সময়ও আয়ান শর্মা নিজে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে অনুপ্রেরণা দেন। বাস্তবে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সম্পাদক আয়ান শর্মা হিন্দু ধর্মালম্বীদের বহু সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপাসনালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নানা দায়িত্বে রয়েছেন। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীক হিন্দু জাতি জনগোষ্ঠীর যে কোনো সমস্যা, শঙ্কায় আগাম নানা ভূমিকা রাখতে হয় তাকে। এ জন্য কৌশলগত ভাবেই অন্য ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী, সংগঠন এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোরও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে রাখতে হয় সমঝোতামূলক সম্পর্ক। সেসব সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকান্ডও যেন আয়ান শর্মার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
লেখক, সংগঠক, সিনিয়র সাংবাদিক