কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন।
দেশে এই মুহূর্তে ৬৯টি কারাগার রয়েছে। এই কারাগারগুলোর ধারণ ক্ষমতা ৪২ হাজার। ৫ আগস্টের পর ৫০ হাজারের কিছু বেশি ছিল। তারপর কারাবন্দির সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে ৬৫ হাজার কারাবন্দি রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর দিন ও পরবর্তী সময়ে ২২ শতাধিক কারাবন্দি পালিয়েছিল। এর মধ্যে কিছু ফিরে আসাসহ ১৫শ’ জনকে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক। গতকাল সকালে কারা সদরদফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন মামলায় দাগি আসামি বা যাদেরকে শীর্ষ সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে এ রকম ১১ জন বন্দি মুক্তি পেয়েছেন। যাদের জেএমবিসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলা হয়েছে তাদের ১৭৪ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। পালানো বিভিন্ন আলোচিত মামলা ও জঙ্গি সদস্যসহ ফাঁসির মামলার আসামির মধ্যে এখনো পলাতক ৭৩ জন। তাদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, কোন মামলার কোন আসামি জামিন পাচ্ছেন তা আমরা জানানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। এজন্য আমরা একটি হট লাইন চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সেটি চালু হলে জানতে সুবিধা হবে।
কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অনৈতিক অভিযোগের ভিত্তিতে চারজন জেল সুপারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ে বেশ কিছু অভিযোগের পর্যালোচনা ও তদন্ত চলছে।
তিনি আরো বলেন, কারা অধিদফতরের লোগো পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখানে নৌকার সিম্বল রয়েছে। যদিও কোনো রাজনৈতিক দল সরকার আমাদেরকে কারা অধিদফতরের লোগো পরিবর্তনের পরামর্শ বা মতামত দেননি। নানা মহলের দাবির প্রেক্ষিতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। আমরা গত ৫ আগস্টের পর প্রচুর জনসাধারণের ফিডব্যাক পেয়েছি। সেটির মূল বিষয় ছিল কারা অধিদফতর লোগো পরিবর্তনের বিষয়।
বর্তমানে দেশে মোট ৬৯টি কারাগার রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো অতিদ্রুত সংস্কার, মেরামত ও পুনঃনির্মাণ দরকার। ৫ আগস্ট পরবর্তী প্রতিটি কারাগারের ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, আমাদের কারাগারের অবকাঠামোগত দুর্বলতা ছিল। আরেকটি বাইরের নিরাপত্তা, যেটি পুলিশ সদস্যরা দিয়ে থাকেন। নিরাপত্তা অনুপস্থিতির কারণে আমরা কারাগার থেকে পালানো ঠেকাতে পারিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন এক বন্দির ওপরে হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে আই জি প্রিজন বলেন, যখন আমরা কোনো বন্দিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই, কারাগারের বাইরে হলেও সে জায়গাটা কিন্তু কারা অধিদফতরে নিয়ন্ত্রণে বা আওতায়। কারণ সেখানে নিরাপত্তায় কারারক্ষী থাকেন। নিরাপত্তা দুর্বলতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দির উপরে হামলার ঘটনাটি ঘটেছিল। পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, সেটা হচ্ছে কারা হাসপাতাল। কারা হাসপাতালের কাজটি সম্পন্ন হলে কারাবন্দিদের আর সরকারি হাসপাতালে পাঠানোর প্রয়োজন হবে না, তখন নিরাপত্তাহীনতাও থাকবে না।
চিকিৎসাধীন বন্দিদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, কোনো সরকারি হাসপাতালে কিন্তু প্রিজন সেল নেই। এটা আমাদের দুর্বলতা। সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালে প্রিজন সেল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য সাধারণ রোগীর সঙ্গে বন্দিদের চিকিৎসা দিতে হয়। কারা হাসপাতাল হয়ে গেলে এ সমস্যা সমাধান হবে।
রাজনৈতিকভাবে যারা ডিভিশন পাওয়ার উপযুক্ত তারা সবাই ডিভিশন পাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক মোতাহের হোসেন বলেন, ডিভিশন পাওয়ার দুটি বিধান আছে- একটি হচ্ছে প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা। আরেকটি সমাজের গণ্যমান্য মন্ত্রী-এমপিরা। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে হয়। এটা তাদের এখতিয়ার- আবেদনের প্রেক্ষিতে তারা ডিভিশনের নির্দেশ দেন।
কারা কর্মচারীদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তো সার্ভিস। সিভিল সার্ভিস বিধান আলোকে কারা কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু কারা অধিদফতরে কর্মরতদের কার্যক্রম তো পোশাকধারী অস্ত্রধারী দুটোই আছে। একই আইনের কারা অধিদফতর পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা মনে করছে। সেজন্য আমরা ভিন্ন আইনের কথা বলছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, কারা উপ-মহাপরিদর্শক মনির আহমেদ, সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. আবু তালেব, সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন ও মিডিয়া) মো. জান্নাত উল ফরহাদ।
নরসিংদীতে সড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পথচারীরা
বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কে সেভেন সিস্টার্স, হিন্দু ও পাকিস্তান নিয়ে চিন্তিত কেন ভারত?