সহকর্মী ভাই, বন্ধুদের দোয়া এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে পেশাদারিত্ব সংশ্লিষ্ট জাতীয় পর্যায়ের ১১টি পুরস্কার ছাড়াও দুই ডজনেরও বেশি সম্মাননা আমার ভাগ্যে জুটেছে। তবে গত ১০ জানুয়ারি, শুক্রবারের সম্মাননা প্রদানের কথাটি আমি আজীবন মনে রাখবো। বিগত দশ বছরের সাংবাদিকতা বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এ সম্মাননা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান, এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করি।
ওইদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন হলরুমে দ্য টাইমস অফ ঢাকা আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমাকে ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় আজীবন সম্মাননা’ দেয়া হয়। পুরো অনুষ্ঠানটি ছিল চমৎকার সাজানো গোছানো, দর্শক আসনগুলো ছিল পরিপূর্ণ। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ব্যান্ড দলের সংগীতানুষ্ঠান থাকায় হলের বাইরেও ছিল বেশ সংখ্যক মানুষের আনাগোনা।
অত্যাবশ্যকীয় কারণেই ডায়াসে অতিথি, বিশেষ অতিথিদের সংখ্যাধিক্য ছিল আর প্রধান অতিথি ছিলেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। কিন্তু কর্তৃত্বধারী রাজনৈতিক নেতাদের ডানে বামে বসে ‘নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার’ বুলি আওড়াতে বিনয়ী আপত্তি ছিল আমার। তাই আয়োজকদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে ক’জন সাংবাদিকসহ দর্শক সারির সোফাতেই বসেছিলাম।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়েই শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপরই শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান দ্য টাইমস অফ ঢাকা’র এডিটর আল বারু মোস্তাকিম নিবিড়। এবার ডায়াসের নিচে দাঁড়িয়ে শিল্পীরা পর পর দুটি দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করতেই যেন পুরো হলরুমের পরিবেশ বদলে গেল। দর্শক, শ্রোতা, অতিথিবৃন্দের ছন্দময় হাততালি আর মুখে বাংলাদেশ বাংলাদেশ ধ্বনিতে মুহূর্তেই গোটা হলরুম মুখরিত হয়ে উঠল।
অবশ্য শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল অনুষ্ঠানটিতে চব্বিশের বিপ্লবে রাজপথে সক্রিয় থাকাদের উৎসাহী অংশগ্রহণের বিষয়টি।
গান থামিয়ে শুরু হলো বিশেষ অতিথিদের বক্তব্য। তবে বক্তব্যের মাঝে মাঝেই চব্বিশের বিপ্লবে জাগরণ তোলা গানগুলোও পরিবেশন করতে থাকলেন রাজপথের সেই শিল্পীরা। নারী ও পুরুষ কণ্ঠের সাবলীল উপস্থাপন, কখনও দুই লাইনের সুর ধ্বনি। মোটকথা কোনোভাবেই অনুষ্ঠানটি একঘেয়ে হয়ে পড়েনি বরং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল অভিন্ন উচ্ছ্বাস।
ক্ষয়ে যাওয়া সাংবাদিকতার চলমান বিপন্নদশা’র মধ্যেই অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গেল। প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষ হতেই উপস্থাপক ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় আজীবনের সম্মাননা’ গ্রহণের জন্য আমার নাম ঘোষণা করেন। তৎক্ষণাৎ অনুষ্ঠানের সভাপতি আল বারু মোস্তাকিম নিবিড় ছুটে মাইকের সামনে গিয়ে অভাবনীয় আবেদনটি ছুড়ে দেন। বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ সাংবাদিকতাকে মর্যাদা ও সমর্থন দিতে এবং সৎ সাংবাদিককে সম্মান জানাতে সবাইকে দাঁড়িয়ে করতালি দেয়ার জন্য আমি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, অতিথিবৃন্দসহ সকলের প্রতি এ অনুরোধ জানাচ্ছি আমি।’
আমি বিব্রতকর অবস্থায় সামনে তাকিয়ে মুগ্ধ হলাম। দেখলাম ডায়াসে থাকা অতিথি নেতা, আমলা, প্রবাসী ও মানবাধিকার সংগঠকেরা সবাই একযোগে দাঁড়িয়ে গেলেন, দাঁড়িয়েছেন কয়েকশ দর্শক-শ্রোতাও। আমি সম্মাননা গ্রহণ থেকে কয়েক মিনিটের প্রতিক্রিয়া বক্তব্য দেয়া পর্যন্ত কাউকে বসতে দেখিনি। সবাইকে এমনকি সাউন্ড সিস্টেম পরিচালনাকারী কর্মি দু‘জনকেও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবেগাপ্লুত হলাম। আমি নিজেকে সম্মানিত হতে দেখে বিব্রতবোধ করেছি, কিন্তু সাংবাদিকতার প্রতি প্রতীকী মর্যাদা দেখে সীমাহীন আনন্দিত হয়েছি।
ধন্যবাদ জানাচ্ছি দ্য টাইমস অফ ঢাকাকে, নিবিড় এর জন্য অনেক ভালবাসা।
(চারদিকে পদক বাণিজ্যের ছড়াছড়ি- এর মধ্যে সম্মাননা গ্রহণের ক্ষেত্রে কি কি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়- সেসব নিয়েই থাকছে পরবর্তী লেখা)