1. my@banglakhobor.online : দৈনিক বাংলা খবর : দৈনিক বাংলা খবর
  2. info@www.banglakhobor.online : বাংলা খবর :
সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:১৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
ছোট সাজ্জাদ পুলিশ কে গুলি করে পালায়, আশঙ্কাজনক-০২, স্ত্রী কে দিয়ে ৩ পুলিশ সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার রহস্য উদ্ঘাটন টাইমের প্রচ্ছদ: মার্কিন প্রেসিডেন্টের ডেস্কের চেয়ারে ট্রাম্পের জায়গায় ইলন মাস্ক দুদকের এক পরিচালক বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিযোগ ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প-পুতিনের ফোনালাপ ব্রহ্মপুত্রে আবারও ডাকাতি, পুলিশ নির্বিকার আশুলিয়ায় ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, একজন গুলিবিদ্ধ কৃষিজমিতে কীটনাশকের ব‍্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে – মৌলভীবাজারে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার গাজীপুরসহ সারাদেশে চলছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চাঁদাবাজ মুক্ত সমাজ গঠনে ভূমিকা পালন করতে হবে – শহিদুজ্জামান কাকন বিএনপি নৈরাজ্যে নয়, উন্নয়নে বিশ্বাসী- কাজী মনিরুজ্জামান

পুলিশকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানো বন্ধ হবে কি

মো. ইমরান আহম্মেদ
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২৫
এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাংলাদেশ পুলিশ খুবই কঠিন এক সময় পার করছে। ইতিহাসের পরম্পরায় নানা ধরনের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এগিয়ে চলা এই বাহিনীকে রাজনৈতিক শক্তির অপরিণামদর্শী ব্যবহারে চরম বিপর্যস্ত এক সময়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

কিন্তু যাঁরা এমনটা করার নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁরা সুযোগ বুঝে ঠিকই সটকে পড়েছেন। চরম বিপদে রেখে গেছেন বাকি পুলিশ সদস্যদের, যাঁরা নিতান্তই কেবল দেশের কথা ভেবে, নিজের পরিবারের প্রয়োজনে এ চাকরি করেন।

পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে ১৮৭ জন পুলিশ সদস্য কাজে যোগদান করেননি; যদিও কেউ কেউ দাবি করছে, হয়তো সংখ্যাটি একটু বেশি হতে পারে।

কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশে ২ লাখ ১৩ হাজারের মতো সদস্য আছেন, যাঁরা ৫ আগস্টের আগেও ছিলেন, এখনো আছেন; আমার ভাবনার জায়গাটি হলো তাঁদের নিয়ে।

৫ আগস্ট বা তার পূর্ববর্তী কিংবা পরবর্তী সময়ে মোট কতজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন, সেটি নিয়েও পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন ধরনের আলোচনা হচ্ছে।

যদিও সরকারিভাবে বলা হয়েছে ৪৪ জন। আপনারা বলতে পারেন, এই ৪৪ জন পুলিশ সদস্য, যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁরা কেউ কি খুব প্রভাবশালী ছিলেন?

তবু তাঁরা হত্যার শিকার হয়েছেন; কারণ, বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক আন্দোলনে কোনো না কোনো পুলিশ সদস্যকে জীবন দিতে হয়েছে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে পুলিশ হত্যার বিচার হয় না। যে বাহিনী মানুষের ন্যায়বিচার প্রদানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত, কিন্তু তাদের সঙ্গে যখন অন্যায় করা হয়, তখন বিষয়টিকে আমরা ধর্তব্যের মধ্যেই নিই না।

আজ যে রাজনৈতিক শক্তি পুলিশকে ব্যবহার করে ফায়দা নিচ্ছে, অথচ সময় পরিবর্তনে হলে তারাই আবার পুলিশকে পিটিয়ে মারছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এ ধারা আর কতকাল চলবে? এর সমাধান কী?

জুলাই আন্দোলনে আমরা যারা মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছি, আমরা তখন দেখেছি কতটা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে।

পুলিশ আইন কিংবা পিআরবি অনুযায়ী, সরকারের পক্ষ থেকে যদি পুলিশকে কোনো আদেশ করা হয়, সে আদেশ মানতে পুলিশ বাধ্য।

৫ আগস্টের পূর্ববর্তী সময়ে পুলিশ যাঁদের গ্রেপ্তার করত আর এখন যাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। কারণ, আগের সরকার যেমন চেয়েছে, পুলিশকে তেমন করতে হয়েছে; এখন সরকার যেমন চাইছে, পুলিশকে তেমনই করতে হচ্ছে। কারণ, পুলিশ সরকারের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান।

বিদ্যমান আইনে এমন কোনো সুযোগ রাখা হয়নি, যাতে পুলিশ স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। কিন্তু আমরা যখন পুলিশকে দোষারোপ করি, তখন বিষয়টি বেমালুম ভুলে যাই।

ইদানীং পুলিশের পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সয়লাব। এটি নিয়ে বেশ হাসিঠাট্টা হচ্ছে। কেউ আবার পুলিশের চরিত্র বদল হবে কি না, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন।

কিন্তু কেউ একবারও এটি নিয়ে কথা বলছেন না, যেভাবে পুলিশকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে আমাদের রাজনৈতিক শক্তিগুলো ব্যবহার করত, তা বন্ধ করতে পুলিশে কী ধরনের গুণগত পরিবর্তন হচ্ছে?

পুলিশের কাজের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা খুবই জরুরি, কিন্তু পুলিশকে যখন রাজনৈতিক শক্তি কোনো অন্যায় আদেশ করবে, সেটি একজন পুলিশ সদস্য কীভাবে ‘না’ বলবেন, সেটির ব্যবস্থা কোথায়?

কোনো অন্যায় আদেশ বাস্তবায়ন না করলে কিংবা সে বিষয়ে ‘না’ বললে সেটি যে ওই পুলিশ সদস্যদের ক্যারিয়ার কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব পড়বে না, তার সুরক্ষা কী?

যদি সরকারি কিংবা ডিপার্টমেন্টাল অন্যায়, অন্যায্য ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করার কারণে ওই পুলিশ সদস্যকে সরকারবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, চাকরিচ্যুত, বদলি কিংবা অন্য কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে তিনি কেন ঝুঁকি নিয়ে এটি করতে যাবেন? ওই পুলিশ সদস্যের জায়গায় আপনি হলে কী করতেন?

সরকারের যদি পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ, পদোন্নতি, পোস্টিংয়ের মতো বিষয়গুলোয় নিজের মতাদর্শের লোককে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, এ ক্ষেত্রে বাহিনী হিসেবে পুলিশের কী করার আছে?

কারণ, বিদ্যমান আইনানুযায়ী, এ বিষয়গুলো সম্পূর্ণভাবেই সরকারের এখতিয়ার।

পুলিশের মতো একটি প্রতিষ্ঠানকে পরিবর্তন করতে হলে বিদ্যমান ও নতুন তত্ত্বের সংমিশ্রণ করা প্রয়োজন। এ জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি, অন্তত ১৫ থেকে ২০ বছর মেয়াদি একটি রোডম্যাপ নির্দিষ্ট করা এবং বছর অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা।

জর্জ অরওয়েলের গল্পের মতো সরকার যদি তার নিজস্ব কয়েকজন বিশ্বস্ত প্রতিনিধিকে দিয়ে পুরো পুলিশ বাহিনী নিয়ন্ত্রণ ও যাচ্ছেতাইভাবে ব্যবহার করতে চায়, বিদ্যমান আইনে ও কাঠামোয় তার পূর্ণ সুযোগ রয়েছে, এখানে পুলিশের কিছু করার ক্ষমতা নেই।

এ জন্য সরকারের ১৮৭ জন নিজস্ব প্রতিনিধির কর্মকাণ্ডে ২ লাখ ১৩ হাজার সাধারণ পুলিশ সদস্য সমস্যায় পড়েন। তাঁরা জীবন দেন, আহত হন।

যেকোনো পরিবর্তনই দীর্ঘমেয়াদি একটি বিষয় এবং ধারাবাহিক একটি প্রক্রিয়া। এটি করতে হলে গুণগত ও কাঠামোগত পরিবর্তন করা খুবই জরুরি। কিন্তু সেটি না করে শুধু যদি ব্যক্তি পরিবর্তন করা হয়, পোশাক বদলে দেওয়া হয়, তা ফলাফলকে কতটা প্রভাবিত করবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।

কিন্তু পুলিশের মতো একটি প্রতিষ্ঠানকে পরিবর্তন করতে হলে বিদ্যমান ও নতুন তত্ত্বের সংমিশ্রণ করা প্রয়োজন।

এ জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি, অন্তত ১৫ থেকে ২০ বছর মেয়াদি একটি রোডম্যাপ নির্দিষ্ট করা এবং বছর অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা।

সেসব বিষয়ের মাধ্যমে পুলিশকে সবচেয়ে বেশিভাবে প্রভাবিত করা যায়, সেগুলোকে চিহ্নিত করে এর আশু সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

এ ছাড়া পুলিশের কাজের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পুলিশিংয়ের সব কাজে প্রযুক্তির সংযোজন, পুলিশকে দেওয়া সব আদেশ লিখিত হওয়া এবং পুলিশের বিদ্যমান আইন সংস্কার করে পুলিশকে জবাবদিহি ও সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

এসব গুণগত ও কাঠামোগত পরিবর্তন আনা হলেও ভেতর থেকে বাহিনীটি ধীরে ধীরে পরিবর্তন হবে। তা না হলে কিছুদিন ভালো-মন্দে চলবে, এরপর আবার কোনো রাজনৈতিক শক্তির হাতে পড়ে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে পুলিশ।

মো. ইমরান আহম্মেদ, পিপিএম; অরিতিক্ত পুলিশ সুপার, বাংলাদেশ পুলিশ ও পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইক, যুক্তরাজ্য।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত