বাংলা একাডেমির আয়োজনে প্রতিবছরের মতো এবারও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে বইমেলা। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ মেলা উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
মেলার এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়ন তৈরির কাজ।
সরেজমিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং বাংলা একাডেমি গিয়ে দেখা যায়, হাতুড়ি-পেরেকের ছন্দে নিরলস কাজ করছেন শ্রমিকরা। স্টল এবং প্যাভিলিয়ন নির্মাণের জন্য শ্রমিকদের কেউ মাটি খোঁড়াখুঁড়ি করছেন, কেউ স্টলের মাপ হিসাব করছেন, আবার কেউবা বাঁশ-কাঠ এবং ইট দিয়ে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করছেন। আবার অনেকে বিদ্যুৎ সংযোগ, বাতি লাগানো, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ নানা আনুষঙ্গিক কাজ করছেন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্টল নির্মাণের জন্য পরিমাপ মতো বাঁশ কাটছিলেন নাজমুল হাসান নামে একজন শ্রমিক। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, স্টল বরাদ্দের পর থেকেই আমাদের কাজ শুরু হয়েছে। তবে তার আগে থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রতিবছর আমরা মেলায় স্টল নির্মাণের কাজ করি। এ বছর আমরা ৪টি স্টল এবং ১টি প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ পেয়েছি। স্টল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে। তবে প্যাভিলিয়ন তৈরিতে কিছুটা সময় বেশি লাগছে।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্টল নির্মাণ করা আতাউর রহমান নামে একজন শ্রমিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, স্টল নির্মাণে আমরা ৮ জন শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করছি। আমাদের আরও ৩টি গ্রুপ রয়েছে। তারা অন্য প্রকাশনীর ভিন্ন ভিন্ন ৫টি স্টল তৈরি করছে। প্রাণের বইমেলাকে প্রাণবন্ত করতে তার চেষ্টার কমতি নেই বলে জানান তিনি।
এর আগে, স্টল এবং প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ নিয়ে কিছুটা ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছিল। বড় এবং স্বনামধন্য অনেক প্রকাশনীর বরাদ্দকৃত স্টল বা প্যাভিলিয়নের পরিমাণ নিয়ে ছিল ক্ষোভ ও অসন্তোষ। আবার বিগত সরকারের দোসর হিসেবে পরিচয় পাওয়ায় কোনও কোনও প্রকাশনীর স্টল না পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে বইমেলা পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সৃষ্ট সব সমস্যা এবং বিতর্ককে ছাপিয়ে প্রাণের এই মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি ধাপে ধাপে এগিয়ে চলছে।
এবারের অমর একুশে বইমেলার নীতিমালায় বলা হয়, বাংলা একাডেমি প্রচলিত কমিশনে একাডেমির বই বিক্রয় করবে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রয় করবে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানবিরোধী, যেকোনও জাতিসত্তাবিরোধী, অশ্লীল, রুচিগর্হিত, শিষ্টাচারবিরোধী, সাম্প্রদায়িক, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন বা জননিরাপত্তার জন্য বা অন্য কোনও কারণে বইমেলার পক্ষে ক্ষতিকর কোনও বই বা পত্রিকা বা দ্রব্য অমর একুশে বইমেলায় বিক্রয়, প্রচার ও প্রদর্শনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এবারের বইমেলার নীতিমালায় বলা হয়েছে।
সেখানে আরও বলা হয়, বইমেলার প্রতিটি প্রবেশদ্বারে নিরাপত্তার স্বার্থে আর্চওয়ের ব্যবস্থা থাকবে। মেলা প্রাঙ্গণে একাডেমির নিজস্ব ক্যান্টিন ও একাডেমি কর্তৃক বরাদ্দকৃত খাবারের স্টল থাকবে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী মানসম্মত খাবারের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে। বইমেলার প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রে ডাক্তার ও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা থাকবে।