ডেইলি অবজারভারের বিজনেস এডিটর (রয়টার এর সাবেক প্রতিনিধি) সদা হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণবন্ত মানুষ নিজাম উদ্দিন আহমেদ ভাই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন। মহান আল্লাহপাক এই মৃদুভাষী, সুব্যবহারকারী, পরোপকারী নিজাম ভাইকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দায়িত্বশীল সাংবাদিক হিসেবে নিজাম ভাই ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামে সমানভাবেই পরিচিত ও সমাদৃত ছিলেন তিনি। তার অকৃত্রিম স্নেহ-মমতা পাওয়ায় বরাবরই নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করতাম, আজ চিরতরে হারানোর বেদনায় অনেকটাই থমকে গেলাম…
আমার সাংবাদিকতার সূচনালগ্নে নিজাম ভাইর প্রচুর সহায়তা পেয়েছি। তিনি তখন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময়ের ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা মুফদী ভাই, নয়ীম নওরোজ ভাইদের সূত্রেই নিজাম ভাইয়ের সান্নিধ্য পাই। ১৯৮৭/৮৮ সালে নিয়মিত চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষায়িত প্রতিবেদনের জন্য প্রায় ৫ মাস সেখানে অবস্থান করতে হয়েছিল আমাকে।
শুরুর দিকে চট্টগ্রামের এসপি মালিক খসরু ভাই ছাড়া সেখানে আর কেউ আমার চেনাজানা ছিল না। নিজাম ভাইর স্নেহ ভালোবাসায় তার প্রেসক্লাব সেক্রেটারির কক্ষটি যেন আমার অঘোষিত চেম্বার হয়ে ওঠে। দুপুরের খাবার, সন্ধ্যার নাস্তা, চা-কফি সবই বরাদ্দ ছিল নিজাম ভাইর কল্যাণে।
নিজাম ভাইয়ের মতো ঘণ্টায় ঘণ্টায় আমার খবর নিতেন আরেকজন মানুষ- তিনি প্রিয় আবু সুফিয়ান ভাই। চট্টগ্রাম বা আশপাশের জেলায় জরুরি যেতে হলে আমার সাথে থাকতেন শ্রদ্ধাভাজন ফটো সাংবাদিক মঞ্জু ভাই। জানি না, তারা কে কোথায় কেমন আছেন?
বহু বছর পর ২০১৫ সালের আগস্টে পল্টন-জিরো পয়েন্ট এলাকায় প্রচণ্ড রাজনৈতিক গোলোযোগের মধ্যে পড়েই নিজাম ভাইয়ের সাথে হঠাৎ দেখা- তখন তিনি রয়টারে কর্মরত ছিলেন। কথা হলো, প্রায় আধা ঘণ্টা পাশাপাশিই ছিলাম। পুরোটা সময় তিনি আমার হাতখানা ধরেই রাখলেন পরম মমতায়…বহুদিন পর দেখা পেয়ে মুহূর্তেই নিজাম ভাই আমার সবকিছু খুটিয়ে খুটিয়ে জানতে চাইলেন।
টিয়ার শেলের ধোয়ায় চারপাশ তখন আরো আচ্ছন্ন। কাঁদানে গ্যাসের কড়া ঝাঁঝে দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম। দু‘জনই পানিতে ভেজানো রুমাল দ্বারা চোখ, নাক, মুখ ঢেকে রাখছিলাম। তার ফাঁকেও নিজাম ভাইকে দেখার জন্য বারবার রুমালখানা সরিয়ে ফেলছিলাম।
একপর্যায়ে বাসস ভবনের ঠিক পেছনের চাপা গলির শেষ মাথা পর্যন্ত হেঁটে যাই, সেখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমরা কথা বলতে থাকি। সহকর্মীদের কাছ থেকে পিতৃতুল্য বড় ভাইয়ের মতো এমন ভালবাসা, মমতার বন্ধন এখন বোধকরি নবীনদের ভাগ্যে জোটেও না।
কক্সবাজারের নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার মাধ্যমে আজ সেই নিজাম ভাইয়ের চলে যাওয়ার খবরটি জানতে পেলাম। ভালো থাকুন নিজাম ভাই, ওপারেও থাকুন শান্তিতে