গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ নদের তীরে আজ রোববার সকাল ৯টা ১১ মিনিটে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। হাজারো মুসল্লির অংশগ্রহণে শেষ হয় তাবলিগের শুরায়ে নেজাম বা মাওলানা জোবায়ের অনুসারীদের প্রথম ধাপের ইজতেমা। মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা জোবায়ের।
মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকাসহ দূরদূরান্তের হাজারো মুসল্লি। এ সময় তারা দুহাত তুলে মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান, মঙ্গল কামনা করেন দেশ, জাতি ও মানবতার।
এক দিন আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, মোনাজাত হবে সকাল ৯টায়। সে জন্য গতকাল শনিবার রাত ও আজ ভোর থেকেই মুসল্লিরা দলে দলে জড়ো হতে থাকেন টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের দিকে। গতকাল রাতের মধ্যেই ভরে যায় পুরো ইজতেমা মাঠ। মাঠে জায়গা না পেয়ে হাজার হাজার লোক অবস্থান করেন সড়ক ও আশপাশের গলিতে। এ সময় আশপাশের সড়কে বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল।
এর আগে ফজরের নামাজের পর ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমানের হেদায়েতি বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তৃতীয় দিন বা শেষ দিনের ইজতেমা। এরপর নসিহতমূলক কথা বলেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। এরপর সকাল ৯টা ১১ মিনিটে মোনাজাত শুরু করেন মাওলানা জোবায়ের। মোনাজাত শেষ হয় ৯টা ৩৫ মিনিটে।
সরেজমিন দেখা যায়, আজ সকাল থেকে টঙ্গীর তুরাগতীরে এগিয়ে চলেছে মানুষের ঢল। যত দূর চোখ যায়, শুধু মানুষ আর মানুষ। সড়ক, মহাসড়ক, খোলা জায়গা, ঘরবাড়ির ছাদ, সড়কে থমকে থাকা বাস, ট্রাক বা পিকআপ ভ্যান—সব জায়গায়ই মানুষ। কেউ বসে আছেন, কেউ দাঁড়িয়ে কান পেতে আছেন মাইকের দিকে। সবার অপেক্ষা আখেরি মোনাজাতের জন্য। এর মধ্যেই শুরু হয় কাঙ্ক্ষিত মোনাজাত। মোনাজাত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে পড়ে ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকা। মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে দোয়া প্রার্থনা করা হয়।
দেখা যায়, মুসল্লিদের পদচারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরা হাউজ বিল্ডিং থেকে গাজীপুর, টঙ্গী-ঘোড়াশাল আঞ্চলিক সড়কের টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে আমতলী, আবদুল্লাহপুর আশুলিয়া সড়কের বেড়িবাঁধ পর্যন্ত ছিল প্রচুর মানুষের সমাগম। এ ছাড়া তুরাগ নদের পাড়ে, ভিড়ানো নৌকা, আশপাশের দোকানপাট, কারখানায় ছিল প্রচুর মানুষ। এ সময় তাঁরা খবরের কাগজ, জায়নামাজ, পলিথিন বিছিয়ে বসে পড়েছিলেন যে যেখানে পেরেছেন সেখানে।
মোনাজাত শেষে কথা হয় সাভার থেকে মোনাজাতে অংশ নিতে আসা মো. আরমান হোসেনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইজতেমা মাঠের ভেতর আমাদের এলাকার তাবলিগের জামাত এসেছে। আমরা মোনাজাতে অংশ নিতে গতকাল সন্ধ্যায় আসি। আমাদের এলাকার তাবলিগের লোকজনের সঙ্গেই রাতে ছিলাম। এরপর আজ সকালে মোনাজাতে অংশ নিয়েছি।’
বিগত বছরগুলোয় তাবলিগের দুই পক্ষ মাওলানা জোবায়ের ও সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা দুই পর্বে আলাদাভাবে ইজতেমা করতেন। তবে এবারই প্রথম মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা দুই ধাপে ইজতেমা করবেন। এর মধ্যে গত শুক্রবার শুরু হওয়া প্রথম ধাপের ইজতেমা শেষ হলো আজ। এ ধাপে অংশ নিয়েছেন ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মুসল্লি। এরপর কাল সোমবার শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা, চলবে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাদের অনুসারীদের ইজতেমা পালনের কথা আছে।